টি.আই.আরিফ:
বিএনপি নির্বাচনে আসুক বা না আসুক তবে দলটির নেতাদের কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ আবার সুযোগের সন্ধানে । গেল নির্বাচনে যারা বিএনপির মনোনয়ন পাননি তারাও এবার আশাবাদী। সেই মনোনয়ন বঞ্চিত ও পরাজিত প্রার্থীদের এখন দলীয় কর্মসূচি পালন করতে এলাকায় দেখা যাচ্ছে। ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ,সোনারগাঁ, আড়াইহাজারে বিএনপি নেতারা অধিক সক্রিয়। সিদ্ধিরগঞ্জে জেলা বিএনপির আহবায়ক গিয়াস উদ্দিনের প্রতিপক্ষ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ কে আলাদা কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে। এই আসনে একাধিক এমপি প্রার্থী রয়েছে। আড়াইহাজারে গেলবার মনোনয়ন বঞ্চিত হয় বিএনপির সাবেক এমপি আতাউর রহমান খান আঙ্গুর। এবার তিনি আগে থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এলাকায় দলীয় কর্মসূচি পালন করে আসছেন। তার প্রতিপক্ষ বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ। গেল নির্বাচনে আজাদ বিশাল ব্যবধানে পরাজিত হয়। এবার তিনি মনোনয়ন পাবেন কিনা সন্দেহ। সোনারগাঁয়ে একই অবস্থা। এই আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছে। গেল নির্বাচনে জাতীয় পাটির লিয়াকত হোসেন খোঁকাকে ছাড় দেয় সাবেক এমপি কায়সার হাসনাত। এবার খোকাকে ছাড় দিতে নারাজ কায়সার। কায়সারকে মাঠে দেখা যাচ্ছে, এক হচ্ছে আওয়ামী লীগ। খোকার বিরুদ্ধে বেশ কিছু বিতর্কীত কর্মকান্ডে জড়ানোর অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে রূপগঞ্জে বিএনপি নেতাদের মধ্যে চরম দ্বন্দ্ব । গেল নির্বাচনে নিজ কেন্দ্রে পরাজিত হয় বিএনপির প্রার্থী কাজী মনিরুজ্জামান । নির্বাচনের পর গত ৪ বছর তাকে এলাকায় খুব কম দেখা গেছে। এখন নির্বাচনকে ঘিরে তাকে এলাকায় দেখা যায়। কিছু কিছু দলীয় কর্মসূচিও তিনি পালন করেন। তার প্রতিপক্ষ দীপু ভুঁইয়াও থেমে নেই। তবে রূপগঞ্জে আওয়ামী লীগের জোড় বেশি। আগামী নির্বাচনে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা কাকে সামনে নিয়ে এগিয়ে যাবে তা ঠিক করেনি দলটির নেতারা। বিএনপির একটি অংশ ক্ষমতাসীন দলের সাথে মিলে থাকে। আপাতত রূপগঞ্জে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে কাজ করে যাচ্ছে রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক, এমপি। থানা আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা মন্ত্রীর পক্ষে কাজ করছে। তিনি চতুর্থবার এমপি হওয়ার চেষ্টায় আছেন। এর আগে তিনি ২০০৮, ২০১৪,২০১৮ সালে আওয়ামীলীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। গাজী ছাড়া রূপগঞ্জে টানা এতদিন ক্ষমতায় থাকার রেকর্ড কারও নেই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক এমপি নির্বাচিত হওয়ার পরে মুড়াপাড়া কলেজ সরকারী হয়েছে, ভুলতা ফ্লাইওভার হয়েছে, তারাবতে শীতলক্ষ্যা নদীর উপর সুলতানা কামাল সেতু হয়েছে, মুড়াপাড়ায় শীতলক্ষ্যা নদীর উপর গাজী সেতু হয়েছে। প্রত্যেকটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তিনি নতুন ভবন দিয়েছেন। নতুন রাস্তা নির্মাণ ও পাকা করেছেন। সর্বশেষ রূপগঞ্জের পূর্বাচলে বাংলাদেশের প্রথম পাতাল মেট্টোরেল এমআরটি লাইন-১ এর নির্মাণ কাজ উদ্বোধন হয়েছে।
গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে নেই কোন অনিয়ম ,দুর্নীতির অভিযোগ। মন্ত্রী হিসেবে গত ৪ বছরে স্থানীয় প্রশাসনের উপর তার কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি । বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসন ,উপজেলা প্রশাসন,পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা তাঁর প্রশংসা করেন। তাঁর চেষ্টায় রূপগঞ্জের দুটি পৌরসভা ও ৬ টি ইউপিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিজয়ী হয়। চব্বিশের ভোটকে ঘিরে রূপগঞ্জে মাঠেই থাকছে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক এমপি ও তার অনুগতরা। গত ১১ ফেব্রুয়ারি রূপগঞ্জের ৪০ টি স্পটে শান্তি সমাবেশ ও মিছিল করেন তিনি। এর আগে গত ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশের সময় রূপগঞ্জের রাজপথ দলে রাখেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী। ৩০ টি স্পটে সেদিন প্রতিবাদ মিছিল করেন তিনি। যা নারায়ণগঞ্জের অন্য এমপিদের করতে দেখা যায়নি। সর্বশেষ গত ১০ এপ্রিল সারা রূপগঞ্জে সন্ত্রাস বিরোধী মিছিল করেন গোলাম দস্তগীর গাজী। দল মতের উর্ধ্বে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। মন্ত্রী হওয়ার পর তিনি রূপগঞ্জ ছেড়ে যাননি। বিগত ১৪ বছর তাকে কর্মীদের পাশেই দেখা গেছে। করোনাকালে তিনি রূপগঞ্জে গাজী পিসিআর ল্যাব স্থাপন করেন যার মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ এবং এর আশেপাশের জেলার মানুষকে রক্ষা পায়।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক আলহাজ্ব নাসির উদ্দিন জানান, রূপগঞ্জে ক্ষমতাসীন দলের দাপট অনেক। আমরা চেষ্টা করি মাঠে থাকার।
বিএনপির সাবেক এমপি আতাউর রহমান আঙ্গুর জানান, আমার কোন গ্রুপ নাই। সবাই আমার। আমি আশাবাদী দল এবার ভুল করবে না। আমি দলীয় মনোনয়ন চাইবো।
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক জানান, বিএনপির বিরুদ্ধে আমাদের ভোট হবে। তারা এখন কোন কিছুতেই পারছে না। বিরোধী দল এখন আমাদের সমালোচনা করার জন্য পিছু লেগেছে। আমরা ভুল করবো না। আমরা মাঠে আছি। জনগণ উন্নয়ন দেখে ভোট দেবে।